এরশাদ বাদশার ডায়েরি

এরশাদ বাদশার ডায়েরি
এরশাদ বাদশার বাংলা ব্লগ

Sunday, April 17, 2016

নতুন আলোয় ক্যারিবীয় সাহিত্য

মারলন জেমস....নামটা কি চেনা চেনা লাগছে? মনে হয়না। বব মার্লে......এই নামটা তো অবশ্যই শুনেছেন।  সেই বব মার্লের দেশ জ্যামাইকার এক লেখকের নাম মারলন জেমস। আরো স্পষ্ট করে বললে, ২০১৫ সালে বুকার অ্যাওয়ার্ড বিজেতা। 
 
মারলন জেমস; ২০১৫ সালের বুকার অ্যাওয়ার্ড বিজেতা

হ্যাঁ, এই প্রথম কোনো জ্যামাইকান লেখক সাহিত্য অঙ্গনের সবেচেয়ে সম্মানের পুরষ্কার "বুকার অ্যাওয়ার্ড'' এ ভূষিত হলেন।

১৯৭০ সালের ২৪ নভেম্বর জ্যামাইকার কিংস্টনে এক পুলিশ দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া মারলন জেমস এর তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জন ক্রো'স ডেভিল (২০০৫), দ্যা বুক অফ নাইট উওম্যান (২০০৯)  এবং ২০১৪ সালে আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ সেভেন কিলিংস। শেষের উপন্যাসটির জন্যই মারলন বুকার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
শুরুতে বব মার্লের নাম উল্লেখ করার সঙ্গত কারন আছে। জ্যামাইকার কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী বব মার্লেকে হত্যাচেষ্টা নিয়েই সাজানো আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ সেভেন কিলিংস এর কাহিনী বাজিমাত করেছে। ৬৮৬ পৃষ্ঠার বিশাল এ উপন্যাসটি সম্পর্কে বুকার অ্যাওয়ার্ডের প্রধান বিচারক মাইকেল উড বলেন-''সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এবং চমকে ভরপুর উপন্যাস।
একই সাথে সাহিত্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় অশান্ত ৭০ এর দশকের জ্যামাইকা সম্পর্কে মারলন এর প্রচ্ছন্ন ধারনা ছিলো। কারণ সেই সময়েই এবং সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু পরিণত বয়সে সেই প্রচ্ছন্ন ধারনাকে শুধু ধারনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তিনি তখনকার প্রেক্ষাপট ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করেছিলেন যার ফসল হলো ''আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ সেভেন কিলিংস''।
এই কথার সত্যতা পাওয়া যাবে তার নিজের জবানিতেই- '' এই উপন্যাস লেখার চিন্তা আমার মাথায় ঘুরছিলো অনেক আগে থেকেই, এমনকি আমার আগের দুই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই চিন্তা করছিলাম জ্যামাইকা নিয়ে লিখবো'' এক সাক্ষাৎকারে মারলন বলেন।
আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ সেভেন কিলিংস এ  উঠে এসেছে  ক্যারীবিয় দ্বীপে মাদক ব্যবসার উত্থানের কথা, কিংস্টনে এক কনসার্টের প্রাক্কালে দূর্বত্তের দ্বারা হত্যাচেষ্টার শিকার হন কিংবদন্তী সংগীত তারকা বব মার্লে। মারলন সেই ঘটনাকে তুলে নিপুনভাবে তুলে এনেছেন তার বইতে। সমসাময়িক রাজনীতি, মাদক চোরাকারবারীদের দৌড়াত্ব, সি.আই. এর ভূমিকা এ সবকিছুই স্থান পেয়েছে বইটিতে। এতোগুলা বিষয়কে একসূতোয় গাঁথা চাট্টিখানি কথা নয়। মারলন এর বইয়ের কলেবরই বলে দেয় আসলে কতোটা সাবলীলতা থাকলে এতো বিশাল আকারের রচনা পাঠকদের উপহার দেওয়া যায়। এখানে যে বিষয়টি ধর্তব্য, তা হলো- এতো বিশাল আকারের রচনায় কিন্তু কাহিনীর গতি কিংবা সাসপেন্স এর কোন ঘাটতি ছিলোনা। যার কারনে এটি সমালোচকদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছে।
আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ সেভেন কিলিংস বুকার জয় করার পর বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ''উইকলি পাবলিশার্স'' র কর্ণধার ঘোষণা দেন- ''কোন বই আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ সেভেন কিলিংস এর মতো এতো চিত্তাকর্ষক নয়।''  নিউইয়র্ক টাইমস এর রিভিউতে 'মিশিকো কাকুতানি' মারলনকে ''বিস্ময়কর ক্ষমতার অধিকারী'' হিসেবে অভিহিত করেন, যিনি কিনা পাঠকদের এক 'সূদূরপ্রসারী, মনোমুগ্ধকর এবং জটিলতর বিষয়সমূহের এক প্রকান্ড বর্ণনা উপহার দিয়েছেন এ বইয়ে।
''তিনি সকল সীমানা এবং সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে গেছেন এ বইতে''  'ক্যারিয়বিয়ান রিভিউ অফ বুকস' এর সম্পাদক এবং ত্রিনিদাদের লেখক ''নিকোলাস লাফনিন' এর মারলন জেমস সম্পর্কে মূল্যায়ন।
মজার ব্যাপার হলো, এতো স্তুতি আর প্রশংসা যেই লেখককে নিয়ে, সেই লেখকের বই ছাপাতে অনাগ্রহী ছিলো অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান!
লেখাপড়ার পাট চুকােনোর পর মি. জেমস এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন কপি রাইটার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং আর্ট ডিরেকটর হিসেবে। লেখালেখিতে অনিয়মিত হওয়ার জন্য জেমস তার কাজকেই দূষতেন।
তার প্রথম উপন্যাস জন ক্রোস ডেভিল এর খসড়া নিউ ইয়র্কের কোন প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের পছন্দ হয়নি। কিন্তু এক আমেরিকান পর্যটক কাইলি জোনস, যিনি কিংস্টনে এক সাহিত্য কর্মশালা চালাচ্ছিলেন, খসড়াটা দেখামাত্রই লুফে নেন। তিনি আশ্চর্য্যন্বিত হন এই ভেবে- বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী লেখক, যার এতো দারুন সংলাপ বলার ক্ষমতা আছে, কারো চোখেই পড়লোনা!!'
এতোক্ষন ধরে যে লেখক সম্পর্কে বললাম, সেই ভদ্রলোকটির অবয়ব বা বেশভূষা সচরাচর কেমন হতে পারে বলে মনে করেন? রাশভারী চেহারা, মুখাবয়বে খেলা করবে গাম্ভীর্য্য, নাকের ঠিক উপরে এবং চোখের ঠিক নিচে থাকবে সোনালী ফ্রেমের একটা চশমা- এই তো?
যারা এমনটি ভাবছেন, তাদের ধারনা একেবারেই ভুল। মারলন জেমস এর চালচলনে মনে হবে কোন রক ধাঁচের ব্যান্ড এর ভোকালিস্ট। শ্যামবর্ণের মানুষটির কুচকুচে কালো চুলগুলি দুই পাশে বিনুনি করা। ট্রাউজার আর টি-শার্ট এর উপরে ব্ল্যাক জ্যাকেট পরা এই অসাধারন প্রতিভাধর ব্যক্তিটিই মারলন জেমস, ৬৮৬ পৃষ্ঠার এক অনবদ্য মহাকাব্যের রচয়িতা।

No comments: